ডা. জুবায়েরকে আমি চিনতাম না। মেসেঞ্জারে শুধু হাই-হ্যালো করতো

Published By Imran Hossain Ontor | 16 April 2025, 04:10 AM

Article Image
ডা. জুবায়েরকে আমি চিনতাম না। মেসেঞ্জারে শুধু হাই-হ্যালো করতো । ছবি: ডা. জুবায়েরকে আমি চিনতাম না। মেসেঞ্জারে শুধু হাই-হ্যালো করতো
Copyright Receive By: contact@worldwidezia.com

ডা. জুবায়েরকে আমি চিনতাম না। মেসেঞ্জারে শুধু হাই-হ্যালো করতো। একদিন আমি এডিসি নাজমুল সম্পর্কে একটা পোস্ট করেছিলাম, যেখানে বলেছিলাম "তিনি বিরোধী দল-মতের উপর নিপীড়ন করছেন"।

সেই পোস্টের পর জুবায়ের আমাকে বললো, সেও নাজমুলের ভিক্টিম এবং তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
সে ১৭ সেকেন্ডের একটা ভিডিও পাঠালো, যা আমি মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রচার করলাম। অনেকেই আমার দেখাদেখি সেইটা শেয়ার করলো।

কিন্তু পরে যা জানতে পারলাম, তা ছিল স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো। ডা. জুবায়ের গ্রেফতার হয়েছিল "নারীদের পর্ন ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া এবং যৌন হয়রানি'র মতো জঘন্য অপরাধে" এবং সেই মামলার চারশিট হয়েছে যেখানে জোবায়ের এর ডিভাইসে নারীদের সেনসেটিভ কন্টেন্ট পাওয়া গিয়েছে।

এখন প্রশ্ন—এমন অপরাধ করে একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করলে, সেটা কি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হয়ে যায়? নারীদের ব্যক্তিগত ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া কিভাবে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র হয়?

জুবায়েরের বিরুদ্ধে না কোনো রাজনৈতিক মামলা হয়েছে, না নাশকতার মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হয়েছে নারী কেলেঙ্কারির মামলা।

এমন একজন অপরাধীর পক্ষে এখন দাঁড়ানো মানে নারীর নিরাপত্তাকে, ন্যায়ের পক্ষকে অপমান করা।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ শুধু একটিই নয়।

সিলেটে এক রোগীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে, নিজের স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছে, প্রেমিকার সেনসেটিভ ভিডিও ফাঁস করেছে, একসাথে ৪-৫ জন নারীর সাথে সম্পর্ক করেছে, অসংখ্য নারীকে হুমকি, গালাগালি ও মানসিক নির্যাতন করেছে।

এই-যে এতগুলো নারী যে কথা বলতেছে এ-সব কিছু মিথ্যা? সব কিছু আওয়ামিলীগের ষড়যন্ত্র? সবাই মিথ্যা বলছে আর সে সত্যি বলছে?

এডিসি নাজমুলের প্রতি আমাদের অনেকেরই ক্ষোভ আছে কারণ আমরা দেখেছি কীভাবে তিনি বিরোধী মত ও অ্যাকটিভিস্টদের উপর নিপীড়ন চালিয়েছেন।
আমরা অনেকেই সেই প্রতিবাদের অংশ ছিলাম। কেউ কেউ মামলা খেয়েছি, কেউ গ্রেফতার হয়েছি, কেউ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছি।
আমরা লড়েছি ন্যায়ের জন্য, মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য।

কিন্তু সেই লড়াইকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে ডা. জুবায়েরের মতো একজন নারী নির্যাতক যেন পার না পেয়ে যায় এটাই আমাদের স্পষ্ট চাওয়া।

আমি আবারো বলছি এডিসি নাজমুলের বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষোভ অটল আছে, কিন্তু সেই ক্ষোভকে ঢাল বানিয়ে জুবায়েরের মতো অপরাধীরা যেন রক্ষা না পায় এটাই আমাদের ন্যায্য অবস্থান। এই ধরনের একজন অপরাধী আমাদের ক্ষোভকে ব্যবহার করে যেন নিজেকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার’ বলে চালিয়ে না দিতে পারে তার জন্য আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

ডা. জুবায়ের শুধু অপরাধ করেনি, এখন সে নিজের ভিক্টিম নারীদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে। আর সেই মামলাকে সামনে রেখে মিডিয়ার মাধ্যমে তাদেরই হয়রানি করছে, অপমান করছে, সামাজিকভাবে হেয় করছে।

একজন পুরুষ, যে নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, তাদের গোপন কনটেন্ট ফাঁস করেছে,
আজ সে নিজেই নিজেকে ‘ভিক্টিম’ সাজিয়ে আসল ভিক্টিমদের মুখ বন্ধ করতে চাইছে।

আমি একজন নারী। আর একজন নারী হিসাবে, নারীদের সম্মানের জন্য, নিরাপত্তার জন্য, আত্মমর্যাদার জন্য আমি এই নারী নির্যাতকের বিরুদ্ধে লড়বো। আমি একজন নারী, আমি নারীহীন সমাজ চাই না। আমি চাই না, কোনো নারী গোপনে কান্না করুক, বা সমাজের ভয়ে চুপ থাকুক। নারী নির্যাতকের পক্ষে কোনো সহানুভূতি নেই। আমি ন্যায়বিচারের পাশে আছি।

জোবায়ের আজ ইনিয়ে বিনিয়ে আমাকে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আপনারা তো আমাকে চেনেন। আমি এসবের পরোয়া করি না, করিনি, করবোও না। সে যা-ই করুক, আমরা তার শাস্তি নিশ্চিত করবো আইনি ভাবে।

আমি একজন নারী হিসাবে, একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে ভিক্টিম নারীদের পাশে আছি এবং থাকবো। তাদেরকে আইনের সহযোগিতা, রাজনৈতিক সহযোগিতা এবং পারলে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করবো। তাদেরকে হেয় হতে দেবো না, ভয় পেতে দেবো না, একা থাকতে দেবো না।

আইনী সহায়তা থেকে শুরু করে সামাজিক সাপোর্ট সবকিছুতে আমি তাদের পাশে আছি।

আমাদের লড়াই শুধু একজন অপরাধীর বিচারের জন্য নয়, এই লড়াই নারীর সম্মানের জন্য, নিরাপত্তার জন্য,
এই লড়াই ভবিষ্যতের মেয়েদের জন্য যাতে আর কেউ এই অন্যায়ের শিকার না হয়।

ভয় নয়, প্রতিবাদই আমার অস্ত্র।
আর আমরা সবাই মিলে এই অন্যায়কারীর মুখোশ খুলবোই।